“Can machines think?” অ্যালান ট্যুরিং ‘মাইন্ড’ জার্নালে প্রকাশ হওয়া তাঁর ‘Computing Machinery and Intelligence’ পেপারটি অনেকটা এভাবেই শুরু করেছিলেন। AI, বর্তমান যুগে অনেক কমন এবং অনেকের কাছেই কিছুটা কনফিউসিং একটি শব্দ। যদিও আমরা সবসময়ই AI ব্যবহার করে আসছি। যেমনঃ speech recognition, text to speech, Google translation, এমনকি গুগল সার্চ ইঞ্জিনেও বেস্ট রেজাল্ট পাওয়ার জন্য AI ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
AI তাহলে কী? একদম সহজভাবে বললে হবে, মানুষ যেভাবে চিন্তা ভাবনা করে সমস্যা সমাধান করে, কম্পিউটারকে সেরকম কৃত্তিম উপায়ে চিন্তা ভাবনা করার উপোযগী করে তুললে তাকে AI বলা যায়। এখন কথা হলো ‘চিন্তা করা’ বলতে আসলে কি বুঝায়? চিন্তা হল নিজের স্মৃতিতে থাকা তথ্য ব্যবহার করে কোনো কিছুতে যুক্তি প্রয়োগ করা। চিন্তা করতে গিয়ে সাধারণত প্রায় ১০০ বিলিয়নের মত নিউরনে আলোড়ন উঠে যায়। তারপরো চিন্তার একটি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা খুজে পেতে মনোবিজ্ঞানীদের বেশ বেগ পেতে হয়। আমরা কখন ‘চিন্তা’ করতে পারদর্শী হই বলে বড়রা বিবেচনা করেন? কথায় কথায় অনেকেই বলে থাকেন, “এই তোর এখনো এতো কিছু বোঝার বয়স হয় নাই” আসলে তারা কি বুঝিয়ে থাকেন? একটু ঘুরিয়ে বললে বলা যায় যে, তারা বুঝিয়ে থাকেন আমরা আমাদের ‘চিন্তা’ কে এখনো ভালোভাবে প্র্যাকটিস করি নি।
একটু জটিল হয়ে গেলো, তাই না? একে আসলে অঙ্ক করার সাথে তুলনা করা যায়। গনিতে পারদর্শী হতে হলে প্রয়োজন অনেক অনেক প্র্যাকটিস। AI এর ক্ষেত্রে ঘটনাটা অনেকটাই এমন। এর মূল ভিত্তি হল লার্নিং অ্যালগরিদম। এই লার্নিং অ্যালগরিদমের মাধ্যমেই কোনো কম্পিউটার শিখতে পারে এবং বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন হতে পারে। লার্নিং অ্যালগরিদমকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। একটি হল ডেটা প্রসেসিং এবং অন্যটি হল নিউরাল নেটওয়ার্ক। আমরা যদি একটি ছবিকে এক ধরনের ডেটা হিসেবে বিবেচনা করি তাহলে দেখা যাবে যে, যেকোনো ছবিকে আমরা সাধারণত দুইটি বৈশিষ্ট্য দ্বারা অন্য ছবি থেকে আলাদা করি। এগুলো হলো রঙ এবং আকার। এছাড়াও আরো কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে কিন্তু আপাতত বোঝার সুবিধার্থে আমরা এই দুইটিকেই বিবেচনা করবো। ইমেজ প্রসেসিং এর জন্য কম্পিউটারে কোনো ছবি ইনপুট দিলে কম্পিউটার রংকে একটি নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এবং আকারকে একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রফল হিসেবে ইনপুট নিবে। এক্ষেত্রে কোন বস্তুর ছবি ইনপুট দেয়া হয়েছে, তা ডিফাইন করে দিবে একটি অ্যালগরিদম, যার মাধ্যমে কম্পিউটার উক্ত ইনপুটের মধ্যে মিনিং খুজে পাবে। এরপর নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে একই বস্তুর ভিন্ন ভিন্ন ছবি থেকে বস্তুটি সম্পর্কে কম্পিউটার একটি ধারনা পাবে, যার ফলে পরবর্তীতে অন্য যেকোনো জায়গায় ঐ বস্তুটিকে দেখলেই কম্পিউটার শনাক্ত করতে পারবে।
এখন প্রশ্ন হলো, নিউরাল নেটওয়ার্ক কী? আমাদের মস্তিষ্ক কোটি কোটি নিউরন দ্বারা গঠিত। এই নিউরনগুলো পরস্পরের সাথে সংযুক্তি স্থাপন করে হাজার হাজার তথ্য প্রসেস করে এবং হাজারো বছরের বিবর্তনের মাধ্যমেই এটি বর্তমানের এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। নিউরাল নেটওয়ার্ক হলো এই বায়োলজিকাল মস্তিষ্কের ইলেক্ট্রনিক রূপ। এখানে বায়োলজিকাল নিউরন এবং আর্টিফিশিয়াল নিউরনের মধ্যে পার্থক্য হলোঃ বায়োলজিকাল নিউরন ডেন্ড্রাইটে ডেটা ইনপুট নেয় এবং প্রসেস করে টার্মিনাল আক্সন দিয়ে অন্য নিউরনে প্রসেসড আউটপুট হিসেবে ইনপুট দেয়, অপরদিকে আর্টিফিশিয়াল নিউরন একটি ফাংশন হিসেবে কাজ করে যেখানে ডেন্ড্রাইটের মতই এটি ইনপুট নিয়ে প্রসেস করে আউটপুট দেয়। অনেকগুলো বায়োলজিকাল নিউরন নিয়ে যেমন মস্তিষ্ক গঠিত হয়, তেমনই অনেকগুলো আর্টিফিশিয়াল নিউরন নিয়ে একটি নিউরাল নেটওয়ার্ক গঠিত হয়।
কিছুক্ষণ আগে চিন্তা ‘প্র্যাকটিস’ করার কথা বলা হয়েছিল। নিউরাল নেটওয়ার্ককে কার্যকরী হতে হলে প্রয়োজন অনেক ডেটা নিয়ে হিসেব নিকেশ করা। যেটাকে আমরা বলতে পারি প্র্যাকটিস করা অথবা ট্রেনিং করা। এই ট্রেনিং এর মাধ্যমেই মূলত লার্নিং অ্যালগরিদম কাজ করা শুরু করে অর্থাৎ শিখতে শুরু করে। যখন AI কোনো ইনপুট নেয় তখন এই শেখা তথ্যের সাথে উক্ত ইনপুটটি মেলানোর চেষ্টা করে। যে AI যত বেশি ‘শিক্ষিত’, সে AI তত নিখুঁতভাবে কাজ করতে পারে। মনে রাখতে হবে যে, AI তে দেয়া ইনপুট সবসময় random হয় এবং সেখান থেকেই AI ‘চিন্তা’ করে একটি আউটপুট দেয়। যেমনঃ গুগল ট্রান্সলেটরে যেকোনো random আর্টিকেল ইনপুট দিলেও অনুবাদ ঠিকই আউটপুট হিসেবে পাওয়া যায়। আমরা যেমন বলি, “Practice makes a man perfect”। তেমনই বলা যায়, “Training makes an AI perfect” খেয়াল করলে দেখা যায় যে, গুগল ট্রান্সলেটর দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে, অনুবাদে ভুলের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমছে। কারণ যতই দিন যাচ্ছে গুগল ট্রান্সলেটরের ট্রেনিং এর পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে এবং ট্রেনিং এর সাথে সাথে AI ও উন্নত হচ্ছে।
আমরা যদি ক্রমাগত AI নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাই ক্রমাগত একে উন্নত করতে থাকি, তাহলে কোনো এক পর্যায়ে AI আমাদের সমান বুদ্ধিমত্তার পর্যায়ে এসে পরবে, এমনকি বেশিও হয়ে যাবে। আজকের প্রসেসরগুলো যেমন নিজেরাই নিজেদেরকে উন্নত করতে সাহায্য করে, তেমনই AI ও একই কাজ করবে। আমি বলছি না যে সেটা এই শতকে হবে। আমি বলতে চাইছি যে, মানুষ যতদিন বাচবে, গবেষণা ততদিন চলবে। এবং কোনো এক পর্যায়ে এই রকম এক অবস্থার সৃষ্টি হবে। তখন কিন্তু তাদের দমানো মুশকিল হবে। এই ক্ষেত্রে সাধারণত মানুষ এবং পিঁপড়ার উদাহরণটা দেয়া হয়। মানুষ কিন্তু পিঁপড়ার শত্রু না। মানুষ কখনো শত্রুর মত আচরণও করে না। রাস্তা দিয়ে পিঁপড়ার লাইন হাঁটতে থাকলেও কেউ পাত্তাও দেয় না। কিন্তু যখন মানুষ কোনো দালান তৈরি করতে যায়, তখন কিন্তু পিঁপড়ার কথা সে ভাবেও না। তার চিন্তাতেই আসে না যে, যেখানে দালান তৈরি করবে সেখানে শত শত পিঁপড়ার কলোনি আছে। লাখ লাখ পিঁপড়ার জীবন কেড়ে নিয়ে সে তার দালান গড়ে তোলে। AI বেশি উন্নত হলে মানুষ সেই পিঁপড়ার পর্যায়ে চলে যাবে। এবং AI যখন তার উদ্দেশ্য সাধনের চেষ্টা করবে, মানুষ তাতে বাধা দিলেই তখন হয়ে যাবে বিপর্যয়।
মানব সভ্যতার উন্নতির জন্য AI প্রয়োজন এবং এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কিন্তু যখনই super-intelligent AI নিয়ে কথা হয় তখন ঐ এক ফলাফলই দেখা যায়। সময়ই বলে দিবে আমাদের কখন কী করা উচিত।